ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সাবধানতা

অনলাইনে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে যেসব সাবধানতা মেনে চলবেন।

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সাবধানতা: সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা আমাদের পোস্ট গুলো নিয়মিত পড়ার জন্য আপনাদের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নে আমাদের দেশে অনলাইন লেনদেনে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার ও দিনদিন বেড়েই চলেছে। আর এর সাথে বাড়ছে ক্রেডিট কার্ড নিরাপত্তা সম্পর্কিত ঝুঁকি। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেমন অনলাইন শপিং এ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে ভয় পাওয়ার তেমন কোনো কারণ নেই। কিছু সাবধানতা অবলম্বন করলে খুব সহজেই আপনারা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে অনলাইন শপিং নিরাপদ করতে পারবেন। তাহলে বন্ধুরা চলুন জেনে নেওয়া যাক অনলাইনে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কেনাকাটার সময় যেসব সাবধানতা আবশ্যক সেসব সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

আরও পড়ুন: অনলাইনে পল্লী বিদ্যুৎ মিটার আবেদন করার নিয়ম ২০২৩

কার্ড তথ্য সেভ না করা

অনেক সময় দেখা যায় কিছু কিছু ওয়েবসাইটে কেনাকাটার জন্য কার্ড ব্যবহারের পরে উক্ত ওয়েবসাইটে কার্ডের তথ্য সেভ করার অপশন দেখা যায়৷ তবে এই অপশন ব্যবহার না করাই ভাল। যদি শপিং ওয়েবসাইটগুলোতে কার্ডের তথ্য সেভ করা হয় তাহলে সেই তথ্য কেন্দ্র করে হ্যাকাররা একাউন্টে অ্যাকসেস পেয়ে গেলে এর মাধ্যমে আপনাদের কার্ডের টাকা খরচ করতে পারবে। যদিও প্রতিবার শপিং করার সময় কার্ডের তথ্য প্রদান করা কিছুটা বিরক্তিকর কাজ মনে হয় কিন্তু কার্ডের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

অবশ্য যেসব সাইটে আপনারা অটোমেটিক রেগুলার বিল পেমেন্ট করতে চান সেসব সাইটগুলোতে কার্ড সেভ না করেও উপায় থাকেনা। যেমন ফেসবুক এবং গুগল অ্যাড।

পরিচিত ও বিশ্বস্ত ওয়েবসাইটে শপিং করা

কোনো প্রোডাক্ট অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে না খুঁজে আপনাদের পরিচিত ও বিশ্বস্ত ওয়েবসাইটগুলোতে আপনাদের কাংখিত প্রোডাক্টসমুহ খুঁজুন। দেখা যায় অনেক প্রতারক ওয়েবসাইট আসল ওয়েবসাইটের মত প্রায় একই নাম ব্যবহার করে প্রতারণা করে থাকে। যেমনঃ daraz.com.bd এর পরিবর্তে daraz.xzz ডোমেইন ব্যবহার করা হতে পারে। তাই যেকোনো অনলাইন শপিং ওয়েবসাইট ব্যবহার করার সেরা ও নিরাপদ উপায় হচ্ছে অফিসিয়াল অ্যাপ ব্যবহার করা। এতে করে ভুল ঠিকানায় নিজের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে প্রতারণার সম্ভাবনা আর থাকেনা। তবে অ্যাপ ডাউনলোড করার আগে আপনারা অবশ্যই রিভিউ এবং ইনস্টল সংখ্যা দেখে নিন। কারন অ্যাপ মার্কেট গুলোতেও এখন ভুয়া অ্যাপ আছে।

এন্টি-ম্যালওয়্যার সফটওয়্যার ইন্সটল

আপনাদের সকল ল্যাপটপ, ডেস্কটপ ও অন্য যেকোনো ব্রাউজিং ডিভাইসে ফায়ারওয়াল ও এন্টি-ম্যালওয়্যার সফটওয়্যারটি ব্যবহার করা অত্যাবশ্যক। ভাইরাস ও বিভিন্ন ধরনের অ্যাটাক থেকে আপনাদের ডিভাইসকে রক্ষা করার জন্য এন্টি-ম্যালওয়্যার সফটওয়্যারটি কাজ করে থাকে। এছাড়াও এন্টি-ম্যালওয়্যার সফটওয়্যার যাতে নতুন ভাইরাস ও থ্রেটস এর বিরুদ্ধে প্রস্তুত থাকতে পারে, তা নিশ্চিত করতে অটো-আপডেট চালু রাখতে পারেন।

পাবলিক ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার না করা

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা আপনারা পাবলিক ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কোনো ধরনের লেনদেন করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকবেন । কারন‌ পাবলিক ওয়াইফাই সেরকম একটা নিরাপদ ডিভাইস নয়, যার ফলে ম্যালওয়্যার ও স্পাইওয়্যার মত ফিচার এর বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রটেকশন থাকেনা এসব নেটওয়ার্কে। তাই এর কারণে পাবলিক ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে অনলাইন শপিং করলে ক্রেডিট কার্ডসহ যেকোনো তথ্য হ্যাকারের হাতে খুব সহজেই চলে যেতে পারে। তাই আপনারা যথাসম্ভব পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করে শপিং করা থেকে বিরত থাকবেন।

সিকিউরিটি সেটিংস অপটিমাইজ করা

আপনাদের কম্পিউটারের সিকিউরিটি সেটিংস অপটিমাইজড আছে কিনা তা অবশ্যই সবসময় চেক করবেন । অনেক সময় অনেকে ম্যালওয়্যার সিস্টেম সিকিউরিটির অকার্যকরিতার ফায়দা তুলে। অপারেটিং সিস্টেম ও ব্রাউজার নিয়মিত আপডেট করে এসব সমস্যা থেকে বেঁচে থাকা যেতে পারে৷ এছাড়া আপনারা ডিভাইসের সিকিউরিটি প্যাকেজে থাকা সিকিউরিটি অপটিমাইজার টুল ব্যবহার করে ব্রাউজার বা অপারেটিং সিস্টেমে থাকা বিভিন্ন ধরনের সমস্যা গুলো খুঁজে বের করতে পারবেন।

এসএসএল এনক্রিপশন চেক করা

অবশ্যই আপনারা অনলাইনে শপিং করার জন্য ক্রেডিট কার্ডের তথ্য প্রদানের আগে উক্ত ওয়েবসাইটে এসএসএল এনক্রিপশন আছে কিনা তা নিশ্চিত করে নিবেন। নিরাপদ ও আসল ওয়েবসাইট গুলো অবশ্যই এসএসএল প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের ওয়েবসাইটের ব্যবহারকারীর সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করবে৷ (যদিও আজকাল প্রতারক সাইটগুলোও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।

বন্ধুরা কোনো ওয়েবসাইটে এসএসএল এনক্রিপশন আছে কিনা তা বুঝা কিন্তু বেশ সহজ। ব্রাউজার এড্রেস বারে থাকা ওয়েবসাইটের ইউআরএল পাশে একটি লক আইকন থাকবে, যদি উক্ত ওয়েবসাইটে এসএসএল ইন্সটল করা থাকে৷ এছাড়া ওয়েবসাইটের এড্রেস শুরু হবে https দ্বারা। আপনারা অবশ্যই মনে রাখবেন, এসএসএল থাকলেও কোনো ওয়েবসাইট নিরাপদ আছে বলে গ্যারান্টি দেওয়া যায়না।

নিয়মিত ক্রেডিট কার্ড স্টেটমেন্ট চেক করা

আপনাদের সম্ভব হলে প্রতিটি লেনদেনের পর ক্রেডিট কার্ড স্টেটমেন্ট চেক করে নিবেন। কোনো ধরনের ফ্রড পারচেজ খুব সহজে এর মাধ্যমে আপনারা খুঁজে পাবেন ও ক্রেডিট কার্ড ইস্যুকারীকে তৎক্ষনাৎ জানাতে পারবেন৷ ভুলভাবে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্রেডিট কার্ড কোম্পানিকে জানালে এই ব্যাপারের সুরাহা সম্ভব। তবে দেরি হলে ক্রেডিট কার্ড কোম্পানির সেখানে কিছুই করার থাকেনা ও এর সম্পূর্ণ দায়ভার ব্যবহারকারীর উপর চলে যায়।

শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার

ক্রেডিট কার্ড দিয়ে অনলাইনে শপিং করার বিষয়ে আরেকটি সিকিউরিটি ডিফেন্স হলো একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা৷ (বিশেষ করে যদি আপনাদের সাইটে কার্ড সেভ করে রাখেন।) প্রতিটি আলাদা অনলাইন শপিং একাউন্টের জন্য আলাদা আলাদা ও শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা একান্ত প্রয়োজন।

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সাবধানতা

এর ফলে একাউন্টসমূহের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত প্রদান করে ও একটি একাউন্ট হ্যাক হলেও অন্যটি নিরাপদ থাকে। একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ডে স্পেশাল ক্যারেক্টার, সংখ্যা ও বড়-ছোট হাতের অক্ষর থাকে। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে আপনাদের সকল পাসওয়ার্ড প্রতি ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে একবার হলেও পরিবর্তন করার চেষ্টা করবেন।
ক্রেডিট কার্ড দিয়ে অনলাইন শপিং এর বিষয়ে আপনারা আরো কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে পারেন। যেমনঃ
  • কার্ডের পিন চায় এমন সাইট ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।
  • আসলে অনলাইন শপিং ওয়েবসাইটগুলো শুধুমাত্র সিভিভি নাম্বার ও ফোনে আসা ট্রানজেকশন পাসওয়ার্ড (OTP) চেয়ে থাকে।
  • আপনাদের ফোন, ল্যাপটপ বা ডেস্কটপে আগে থেকেই প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ইন্সটল করে রাখুন।
  • আপনাদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার হলে যাতে ইমেইল ও এসএমএস এর মাধ্যমে তা জানানো হয় সেই সেটিংস করে রাখুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *