মোবাইল দ্রুত চার্জ করার উপায়: স্মার্টফোনে খুব তাড়াতাড়ি চার্জ হওয়া আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ – এই বিষয় নিয়ে অনেক যুক্তিতর্ক থাকলেও দ্রুত চার্জ হয় এমন স্মার্টফোন পছন্দ করেন না এমন মানুষ হয়ত খুঁজে পাওয়াই যাবেনা। ফোন যত দ্রুত চার্জ হয়, তত তাড়াতাড়ি তা ব্যবহারের উপযোগী হয়ে যায়।
এই জন্য ফাস্ট চার্জ হয় বর্তমান এমন স্মার্টফোন মার্কেটে একটি ফিচাররূপে দেখা যাচ্ছে। স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলো কে কার চেয়ে অধিক ফাস্ট চার্জিং ফিচার প্রদান করতে পারে তা নিয়ে প্রতিযোগিতায় মগ্ন। এই প্রতিযোগিতার সুবিধা কারন হিসেবে কনজ্যুমার এর কাছে সুলভ মূল্যে পৌছে যাচ্ছে ফাস্ট চার্জিং স্মার্টফোন।
আজকের এই নিবন্ধ থেকে জানতে পারবেন খুব তাড়াতাড়ি চার্জ হয় এমন সব ফোন সম্পর্কে। উল্লেখ্য যে এই নিবন্ধে শুধুমাত্র ফাস্ট চার্জিং ফোনসমূহের তালিকা দেওয়া আছে।, যার মানে তালিকার ফোনগুলো নির্বাচনের সময় ফাস্ট চার্জিংকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: সিম কতদিন বন্ধ থাকলে মালিকানা চলে যায়
মোবাইল দ্রুত চার্জ করার উপায়
ফোন চার্জে বসিয়ে ব্যবহার করা একদমই উচিত নয়। কল, মেসেজ, বিভিন্ন শপিং অ্যাপের ব্যবহার, এমন কি ক্রমাগত গেমও খেলে থাকেন অনেকেই। চার্জে থাকাকালীন ফোন ব্যবহার করলে খুব স্বাভাবিকভাবেই ফোনের চার্জ হতে সময় বেশি লাগে। এমনকি ফোন তাড়াতাড়ি খারাপ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও অনেকটাই বেড়ে যায়। তাই চার্জ দেওয়ার সময় ফোন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
- জিপিএস, ওয়াই-ফাই অফ রাখুন
- চার্জিংয়ের সময় স্মার্টফোন ব্যবহার এড়িয়ে চলুন
- অরিজিনাল কেবল ও অ্যাডাপ্টার ব্যবহার করুন
- ব্যাকগ্রাউন্ড প্রসেসিং অ্যাপগুলো বন্ধ করুন
- এয়ারপ্লেন মোড ব্যবহার করুন
- ফাস্ট চার্জিং অ্যাডাপ্টার ব্যবহার করবেন না
- সারারাত ধরে ফোন চার্জে বসিয়ে রাখবেন না
শাওমি ১১আই হাইপারচার্জ – Xiaomi 11i Hypercharge
শাওমি ১১আই হাইপারচার্জ ফোনটির সাথে আপনাদের নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছুই নেই। অত্যন্ত সুলভ মূল্যে ৫জি ও দুর্দান্ত ১২০ওয়াট ফাস্ট চার্জিং ফিচার অফার রয়েছে এই শাওমি ফোনটিতে। ফোনটির নামে থাকা “হাইপারচার্জ” টাইটেল দেখেই বুঝাতে পারা যায় ফোনটির মূল আকর্ষণ এর ফাস্ট চার্জিং।
শাওমি ফোনের বক্সে দেওয়া ১২০ওয়াট ফাস্ট চার্জার ব্যবহার করে ফোনটির ৪৫০০মিলিএম্প ব্যাটারি মাত্র ১৫মিনিটে শূন্য থেকে ফুল চার্জ করা যাবে বলে দাবি করছে শাওমি কর্তৃপক্ষ। মিডিয়াটেক এর ডাইমেনসিটি ৯২০ ৫জি প্রসেসর দ্বারা চালিত এই স্মার্টফোনটিতে রয়েছে ৬.৬৮ইঞ্চির অ্যামোলেড স্ক্রিন, যা আবার ১২০হার্জ রিফ্রেশ রেট সাপোর্টেড।
শাওমি ১১আই হাইপারচার্জ ফোনটির ক্যামেরা ও সেকশনে পিছিয়ে নেই । এছাড়াও এই ফোনটিতে ১০৮মেগাপিক্সেল মেইন সেন্সরের পাশাপাশি ৮মেগাপিক্সেল এর আলট্রাওয়াইড সেন্সর ও ২মেগাপিক্সেলের ম্যাক্রো ক্যামেরা রয়েছে । সেল্ফি ক্যামেরা হিসেবে রয়েছে ১৬মেগাপিক্সেল সেল্ফি ক্যামেরা।
শাওমি মি ১০ আলট্রা – Xiaomi Mi 10 Ultra Mi 10 Ultra
শাওমি মি ১০ আলট্রা ফোনটিতে শাওমির ১২০ওয়াট ফাস্ট চার্জিং প্রযুক্তি প্রথম দেখা যায় । তবে শাওমি মি ১০ আলট্রা এর ফাস্ট চার্জিং শাওমি ১১আই হাইপারচার্জ এর মতো এতটা ফাস্ট নয়। শাওমি এর উল্লেখ যোগ্য তথ্যমতে শাওমি মি ১০ আলট্রা এর ৪৫০০মিলিএম্প ব্যাটারি চার্জ হতে সময় লাগবে ২৩মিনিট ।
শাওমি মি ১০ আলট্রা ফোনটির নামের সাথে যুক্ত থাকা “আলট্রা” শব্দের প্রতিফলন যাতে ফোনটির সকল বিষয়ে লক্ষণীয় হয়, তা নিশ্চিত করতে যথেষ্ট বদ্ধ পরিকর ছিলো শাওমি। শাওমি মি ১০ আলট্রা ফোনটিতে একটি “আলট্রা” ফোন তৈরির জন্য আলট্রা ডিসপ্লে থেকে শুরু করে আলট্রা চার্জিং পর্যন্ত প্রায় প্রত্যেকটি ফিচার এক্সট্রিম লেভেলের রাখা হয়েছে । দ্রুত চার্জ হয়
শুধুমাত্র মি ১০ আলট্রা ফোনটির ওয়্যারড চার্জিং নয়, এর ওয়্যারলেস চার্জিং ও অনেক দ্রুত। এই ফোনটি ৫০ওয়াট এর ওয়্যারলেস চার্জিং সাপোর্ট করে । ফোনটিতে ফাস্ট চার্জিং প্রযুক্তির পাশাপাশি ১২০হার্জ রিফ্রেশ রেটের ৬.৬৭ইঞ্চির ওলেড স্ক্রিন, কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮৬৫ ও ৪৮মেগাপিক্সেল কোয়াড ক্যামেরার মত ফিচার রয়েছে ।
শাওমি মি ১১ আলট্রা – Xiaomi Mi 11 Ultra
শাওমির স্মার্টফোন এর আরেকটি “আলট্রা” ফোন জায়গা করে নিয়েছে আমাদের এই ফাস্ট চার্জিং স্মার্টফোন এর তালিকায়। মাত্র ৩৬মিনিটের মধ্যে ৬৭ওয়াট ফাস্ট চার্জার ব্যবহার করে শাওমি মি ১১ আলট্রা ফোনটির ৫০০০মিলিএম্প ব্যাটারি ফুল চার্জ করা হয় । এই ফোনটিতে আবার ও ৬৭ওয়াট ওয়্যারলেস চার্জিং সাপোর্ট রয়েছে যার মাধ্যমে মাত্র ৪০মিনিটের মধ্যেই ফোনটি ফুল চার্জ সম্ভব। শাওমি মি ১১ আলট্রা ফোনটিতে ৬.৮১ইঞ্চির অ্যামোলেড ডিসপ্লে রয়েছে , যা ১২০হার্জ রিফ্রেশ রেট সাপোর্টেড। কোয়ালকম এর স্ন্যাপড্রাগন ৮৮৮ ৫জি চিপসেট দ্বারা চালিত এই স্মার্ট ফোনটিতে ৫০মেগাপিক্সেল ট্রিপল ক্যামেরা সেটাপ করা রয়েছে, যার মধ্যে ৫০মেগাপিক্সেল মেইন সেন্সরের পাশাপাশি ৪৮মেগাপিক্সেল পেরিস্কোপ টেলিফটো লেন্স ও ৪৮মেগাপিক্সেল আলট্রাওয়াইড সেন্সর রয়েছে। অর্থাৎ শাওমি মি ১১ আলট্রা ফোনটি শুধু নামেই নয়, বরং কাজেও এটি আলট্রা।
ওয়ানপ্লাস ৯ প্রো – OnePlus 9 Pro
ওয়ানপ্লাস এর ফ্ল্যাগশিপ, ওয়ানপ্লাস ৯ প্রো ও রয়েছে আমাদের এই ফাস্ট চার্জিংস্মার্টফোনের তালিকায়। ৬৫ওয়াট ওয়্যারড চার্জিং এর পাশাপাশি ৫০ওয়াট ওয়্যারলেস চার্জিং সাপোর্ট করে এই স্মার্ট ফোনটি। ৬৫ওয়াট এর ফাস্ট চার্জার ব্যবহার করে ফোনটির ৪৫০০মিলিএম্প এর ব্যাটারি ৩০মিনিটের মধ্যে শূন্য থেকে ফুল চার্জ করা সম্ভব। অন্যদিকে ওয়্যারলেস চার্জিং এর ক্ষেত্রে সময় লাগতে পারে মাত্র ৪৩মিনিটের মত।
ওয়ানপ্লাস ৯ প্রো তে ৬.৭ইঞ্চির অ্যামোলেড স্ক্রিন ব্যবহার করা হয়েছে ওয়ানপ্লাস ৯ প্রো তে, যা আবার ১২০হার্জ রিফ্রেশ রেট সাপোর্টেড। স্ন্যাপড্রাগন ৮৮৮ ৫জি প্রসেসর দ্বারা চালিত এই ফোনটিতে আর ও রয়েছে ৪৮মেগাপিক্সেল কোয়াড ক্যামেরা সেটাপ, যার মধ্যে ৪৮মেগাপিক্সেল মেইন সেন্সর এছাড়াও এর পাশাপাশি রয়েছে ৫০মেগাপিক্সেল আলট্রাওয়াইড ও ৮মেগাপিক্সেল টেলিফটো ক্যামেরা।
হুয়াওয়ে পি৫০ প্রো – Huawei P50 Pro
হুয়াওয়ে ৬৭ওয়াট ফাস্ট চার্জার এর ফোন, হুয়াওয়ে পি৫০ প্রো এর মাধ্যমে ফাস্ট চার্জিং ফোনের এই তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ৬.৬ইঞ্চির ওলেড ডিসপ্লে ও ১২০হার্জ রিফ্রেশ রেট ডিসপ্লের এই ফোনটিতে ব্যবহার করা হয়েছে স্ন্যাপড্রাগন ৮৮৮ ৪জি প্রসেসর। এই ফোনটিতে ৪৩৬০মিলিএম্প ব্যাটারির ফোন, হুয়াওয়ে পি৫০ প্রো ৬৬ওয়াট ফাস্ট চার্জার সাপোর্টেড। আবার ৫০ওয়াট ওয়্যারলেস চার্জিং ও সাপোর্ট করে ।
এই ফোনটিতে থাকা কোয়াড ক্যামেরা সেটাপ যে কাউকে মুগ্ধ করতে বাধ্য। ৫০মেগাপিক্সেল মেইন ক্যামেরার পাশাপাশি ফোনটিতে রয়েছে ৬৪মেগাপিক্সেল পেরিস্কোপ টেলিফটো ক্যামেরা, ১৩মেগাপিক্সেল আলট্রাওয়াইড ক্যামেরা ও আরো একটি ৪০মেগাপিক্সেল সেন্সর। অর্থাৎ ক্যামেরা সেকশনে বাজারের সেরা ক্যামেরা ফোনগুলোর সাথে সমানে প্রতিযোগিতায় নেমেছে হুয়াওয়ে পি৫০ প্রো ডিভাইসটি দ্রুত চার্জ হয়।
শাওমি রেডমি নোট ১১ প্রো – Redmi Note 11 Pro
শাওমি রেডমি নোট ১১ প্রো ফোনটিতে রয়েছে ৫০০০মিলিএম্প এর বিশাল ব্যাটারি এর বক্স যেখানে থাকা ৬৭ওয়াট ফাস্ট চার্জার দ্বারা মাত্র ৩০মিনিটের মধ্যে শূন্য থেকে ফুল চার্জ সম্ভব। শুধুমাত্র দ্রুত চার্জ হয় এই ফোনটির একমাত্র আকর্ষণ নয়। ১২০হার্জ রিফ্রেশ রেটের ৬.৬৭ইঞ্চির সুপার অ্যামোলেড ডিসপ্লে রয়েছে রেডমি নোট ১১ প্রো ফোনটিতে। রেডমি নোট ১১ প্রো ফোনটি চলে মিডিয়াটেক এর হেলিও জি৯৬ প্রসেসর দ্বারা। এই ফোনটিতে ১০৮মেগাপিক্সেল কোয়াড ক্যামেরা সেটাপ রয়েছে ৷ কোয়াড ক্যামেরা সেটাপের মধ্যে একটি ১০৮মেগাপিক্সেল সেন্সর ও ৮মেগাপিক্সেল এর আলট্রাওয়াইড ক্যামেরা রয়েছে। ক্যামেরার দিক দিয়ে তালিকার অন্য ফোন রিয়েলমি ৮ প্রো এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ শাওমি রেডমি নোট ১১ প্রো।
অপো ফাইন্ড এক্স৩ প্রো – Oppo Find X3 Pro
দ্রুত চার্জিং ফোনসমূহের মধ্যে অপো এর ফ্ল্যাগশিপ, অপো ফাইন্ড এক্স৩ প্রো ফোনের একটি। ৪৫০০মিলিএম্প ব্যাটারির এই ফোনটিকে বক্সে দেওয়া ৬৫ওয়াট এর ফাস্ট চার্জার দ্বারা ৩০মিনিটের কম সময়ের মধ্যে শূন্য থেকে ১০০% চার্জ করা সম্ভব। আবার ৩০ওয়াট ফাস্ট ওয়্যারলেস চার্জিং দ্বারা ও ফোনটি ৮০মিনিটের মধ্যে ফুল চার্জ করা যাবে।
অপো ফাইন্ড এক্স৩ প্রো ফোনটির প্রসেসর হিসেবে থাকছে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮৮৮ ৫জি চিপসেট। ৬.৭ইঞ্চির অ্যামোলেড ডিসপ্লের এই ফোনটি ১২০হার্জ রিফ্রেশ রেট সাপোর্টেড। অপো’র “ক্যামেরা ফোন” স্লোগানের অংশ হিসেবে এবং এই ফোনের মূল আকর্ষণ হলো ৫০মেগাপিক্সেল কোয়াড ক্যামেরা সেটাপ।
রিয়েলমি এক্স৫০ প্রো – Realme X50 Pro
সম্প্রতি ফাস্ট চার্জকে অনেকটা সিরিয়াসলি দিচ্ছে রিয়েলমি। এই ফোনের অংশ হিসেবে রিয়েলমি এক্স৫০ প্রো ফোনটিতে দেখা মিলবে ৬৫ওয়াট ফাস্ট চার্জিং । রিয়েলমি এর দাবি মাত্র ৩৫মিনিটে রিয়েলমি এক্স৫০ প্রো এর ৪২০০মিলিএম্প এর ব্যাটারি ফুল চার্জ করা যাবে।
রিয়েলমি এক্স৫০ প্রো ফোনটির প্রসেসর হিসেবে থাকছে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮৬৫ ৫জি চিপসেট। এছাড়াও ফোনটির ৬.৪৪ইঞ্চির সুপার অ্যামোলেড ডিসপ্লে ৯০হার্জ রিফ্রেশ রেট সাপোর্টেড। রিয়েলমি এক্স৫০ প্রো ফোনটিতে ৬৪মেগাপিক্সেল কোয়াড ক্যামেরা সেটাপ রয়েছে ও
দ্রুত চার্জ হয়।
ভিভো ভি২৩ প্রো – Vivo V23 Pro
ভিভো ভি২৩ প্রো ফোনটির ব্যাটারিতে রয়েছে ৪৩০০মিলিএম্প এর। এই ফোনটিল ফোনের বক্সে থাকা ফাস্ট চার্জার দিয়ে শূন্য থেকে ৬৩% চার্জ করা যাবে মাত্র ৩০মিনিট সময়ের মধ্যে। অর্থাৎ এক ঘন্টার কম সময়ে ফোনটি শূন্য থেকে ফুল চার্জ করা যাবে। ৯০হার্জ অ্যামোলেড স্ক্রিনের এই ফোনটি চলবে মিডিয়াটেক এর ডাইমেনসিটি ১২০০ ৫জি প্রসেসর দ্বারা।
ভিভো’ অন্য ফোনগুলোর মত ভিভো ভি২৩ প্রো ফোনটিতেও প্রধান ফোকাস এর ক্যামেরা সেকশন। ট্রিপল ব্যাক ক্যামেরা ছাড়াও সেটাপের এই ফোনটিতে রয়েছে ১০৮মেগাপিক্সেল মেইন সেন্সর, ৮মেগাপিক্সেল আলট্রাওয়াইড ক্যামেরা ও ২মেগাপিক্সেল ম্যাক্রো সেন্সর। এই ফোনটির ফ্রন্টে রয়েছে দুইটি ক্যামেরা, যার মধ্যে একটি ৫০মেগাপিক্সেল মেইন সেন্সর ও অপরটি ৮মেগাপিক্সেল আলট্রাওয়াইড ক্যামেরা ।
Related