সুস্থ থাকতে ৫ টি যোগ ব্যায়াম
শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য যোগ ব্যায়াম এর কোন বিকল্প নেই। আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য অবশ্যই শরীরচর্চা করতে হবে। শরীর চর্চার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো উপায় হল যোগব্যায়াম।
![]() |
সুস্থ থাকতে ৫ টি যোগ ব্যায়াম |
সকল বয়সের মানুষের উচিত কম বেশী ব্যায়াম করা। প্রত্যেকের শরীরচর্চা করা উচিত। যোগব্যায়াম করা খুবই সুবিধাজনক কারণ যোগব্যায়াম কোন জিমে না গিয়ে বাড়িতে বসেই করা যায়। যোগব্যায়াম করার জন্য কোন যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয় না।
তাই অতি সহজেই যে কেউ বাড়িতে বসে যোগ ব্যায়াম অনুশীলণ করতে পারে।
যোগ ব্যায়ামের উপকারিতা
যোগ ব্যায়াম শরীরের গভীর থেকে অনেক উপকার করে থাকে। শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে। যোগ ব্যায়ামের ফলে শরীরের কোষগুলো সঠিক বৃদ্ধি হয়। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় ত্বক কোমল এবং লাবণ্য ও মসৃণ হয়।
এছাড়াও শরীরের লোহিত কণিকা শ্বেত কণিকা উৎপাদন এবং এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুস্থ থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ৫ টি যোগব্যায়াম।
উষ্ট্রাসন
উষ্ট্রাসন খুবই উপকারী একটি যোগ ব্যায়াম। উষ্ট্রাসন করার জন্য প্রথমে আপনাকে হাঁটু গেড়ে বসতে হবে। এরপর মেরুদন্ড ভাজ করে পিছনের দিকে ঝুঁকে পায়ের গোড়ালি ধরতে হবে। সুস্থ থাকতে ৫ টি যোগ ব্যায়াম
এভাবে 20 থেকে 30 সেকেন্ড থাকার চেষ্টা করুন। যদিও শুরুতে একটি খুবই কষ্টকর তবে কিছু সময় চেষ্টা করার ফলে এটি বেশ সহজ হয়ে যায়।
তবে মনে রাখবেন এই যোগ ব্যায়াম টি শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। উষ্ট্রাসন অনুশীলন করার ফলে মেরুদন্ড নমনীয় হয়। এবং মেরুদন্ড লম্বা হওয়ার ক্ষেত্রে এটা খুবই সহায়ক।
যাদের বাতের ব্যথা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এই ব্যায়ামটি অনেক উপকারী। এছাড়া অনেকের কোমরে ব্যথা থাকে তারা এটা নিয়মিত অনুশীলন করলে সহজেই কোমরে ব্যথার সমস্যা হতে মুক্তি পাবে।
যাদের বুকের খাচা সুগঠিত নয় উষ্ট্রাসন নিয়মিত অনুশীলনের ফলে বুকের খাচা স্বাভাবিক হয় এবং সুগঠিত হয়। উষ্ট্রাসন কোষ্ঠকানিষ্ঠ তা দূর করে যারা কোষ্ঠকানিষ্ঠ এর সমস্যায় ভুগছেন। সুস্থ থাকতে ৫ টি যোগ ব্যায়াম
তাদের ক্ষেত্রে উষ্ট্রাসন চর্চা করার ফলে সহজেই সমস্যা দূর হয়ে যাবে। এছাড়াও হাঁপানি এবং লো ব্লাডপ্রেসার এর সমস্যা সমাধানে বেশ সহায়ক।
তাছাড়াও পেটের চর্বি এবং অতিরিক্ত মেদ কমানোর ক্ষেত্রে উষ্ট্রাসন খুবই একটি কার্যকরী যোগব্যায়াম বলা যায়। যোগ ব্যায়ামের ভিতরে উষ্ট্রাসন একটি আদর্শ যোগ ব্যায়াম। এবং এর উপকারিতা অনেক তাই আপনিও উষ্ট্রাসন অনুসরণ করতে পারেন।
পদ্মাসন
পদ্মাসন অনুশীলন করা খুবই সহজ। পদ্মাসন করার জন্য প্রথমে বসতে হবে এরপর ডান পা বাম উরুর উপরে এবং বাম পা ডান উরুর উপরে রাখতে এরপর দুই হাত দুই হাঁটুতে রাখতে হবে।
এবং মেরুদন্ড এবং ঘাড় সোজা রেখে 30 সেকেন্ড বসে থাকতে হবে। পদ্মাসন অনেক সহজ হলেও এর উপকারিতা অনেক। পদ্মাসন অনুশীলনের ফলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। যাদের স্মৃতিশক্তি দুর্বল তাদের ক্ষেত্রে এই ব্যায়ামটি খুবই উপকারী।
পদ্মাসন হাঁটুর ব্যথা দূর করে এবং পায়ের পেশির দুর্বলতার সমস্যা সমাধান করে। পায়ের সংযোগ স্থলে ব্যথা হাটাহাটি বা দৌড়াদৌড়ি করলে অল্পতেই যাদের পা ব্যথা হয়ে যায়। তাদের ক্ষেত্রে পদ্মাসন এই সমস্যা থেকে সহজে মুক্তি দেয়।
এসব ছাড়াও তাদের অনিদ্রার সমস্যা রয়েছে। যাদের রাতে ঘুম হয় না তারা পদ্মাসন অনুশীলন করলে দারুন ফল পাবে।এছাড়া মেরুদণ্ডের ব্যথা দূর করে এবং মেরুদন্ড সচল ও নমনীয় রাখতে সহায়তা করে।
পদ্মাসন খুবই সহজ এবং কার্যকর একটি যোগাসন।
বজ্রাসন
বজ্রাসন সবচেয়ে সহজ যোগ ব্যায়াম। বজ্রাসন করার জন্য প্রথমে হাঁটু ভাঁজ করে বসতে হবে। এরপর দু পায়ের পাতা একত্র করে পাছার সাথে পায়ের গোড়ালি লাগাতে হবে এবং হাত দুটো হাঁটুর উপরে রেখে বসতে হবে।
এভাবে দুই থেকে তিন মিনিট বসে থাকতে হবে। আসন করা অবস্থায় অবশ্যই শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে হবে। আসন শেষে 30 সেকেন্ড শবাসন করতে হবে।
বজ্রাসন অনুশীলনের ফলে পায়ের পাতা এবং হাঁটুর ব্যথা সহজেই দূর হবে। অরুচি এবং ক্ষুধামান্দ্য সমস্যার সমাধানে খুবই কার্যকরী। এছাড়াও খাদ্য হজমের ক্ষেত্রে সহায়তা বেশ করে।
ভুজঙ্গসন
ভুজঙ্গাসন করার জন্য প্রথমে উপূর হয়ে শুতে হবে। এরপর দুটো হাত কোমর বরাবর রেখে কোমরের উপরে ভর করে থাকতে হবে। এবং ঘাড় ও মেরুদন্ড পিছনের দিকে যতটা সম্ভব বাঁকা করতে হবে।
এভাবে 30 সেকেন্ড থাকতে হবে। এরপর অবশ্যই 30 সেকেন্ড শবাসন করতে হবে। ভুজঙ্গাসন শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি যোগাসন। সুস্থ থাকতে ৫ টি যোগ ব্যায়াম
যাদের শিরদাঁড়া বাঁকা তাদের তাদের ক্ষেত্রে শিরদাঁড়া স্বাভাবিক এবং সোজা হতে সহায়ক। ভুজঙ্গাসন অনুশীলন এর ফলে পেট ও পাকস্থলীর অনেক উন্নতি ঘটে এবং এটা অত্যন্ত উপকারী।
এছাড়াও কোমর, বুক ও পিঠ এর গঠন ভালো রাখে। ভুজঙ্গাসন অনুসরণ করার ফলে মেরুদন্ডের সামনের দিকের স্নায়ুতন্ত্র সবল হয়। নিয়মিত ভুজঙ্গাসন অনুশীলন করার ফলে মেরুদন্ড সোজা হয় এবং বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
ধনুরাসন
এই আসনটি কিছুটা ধনুকের মত। ধনুরাসন করার জন্য প্রথমে উপর হয়ে শুতে হবে। এরপর হাঁটু ভাঁজ করে দুটো হাত পিছনের দিকে দিয়ে পা দুটো ধরে ধনুকের মতো বাঁকা হতে হবে।
যতটা সম্ভব বাঁকা হবেন। ধনুরাসন যোগব্যায়াম কি অনেক উপকারী একটি আসন। এর ফলে যাঁরা লিভার সমস্যায় ভুগছেন। তারা নিয়মিত ধনুরাসন অনুশীলন করলে লিভারের সমস্যার সমাধান পাবেন।
এছাড়াও যাদের পেটে অতিরিক্ত মেদ চর্বি থাকে তাদের মেদ চর্বি কমাতে সহায়তা করে। ধনুরাসন অনুশীলনের ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা হতে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়।
ধনুরাসন চর্চার ফলে মেরুদন্ড নমনীয় হয়। বিশেষ করে যাদের কুঁজো হওয়ার সমস্যা রয়েছে তাদের মেরুদন্ড সোজা হওয়ার ক্ষেত্রে খুবই সহায়তা করে।
এই পাঁচটি যোগাসন করলে আপনি অত্যন্ত ভাল ফলাফল পাবেন। বিশেষ করে যোগ ব্যায়াম খুব সহজেই চর্চা করা যায় কোন প্রকার অজুহাত ছাড়াই। কারণ যখন চর্চা করার জন্য জিমনেশিয়াম এবং কোন সরঞ্জাম এর প্রয়োজন হয় না।
তাই প্রতিদিন অন্তত অল্প কিছু সময় নিয়ে যোগ ব্যায়ামের কয়েকটি আসন চর্চা করা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।